আমার জীবনবোধ - তসলিমা নাসরিন

আমার জীবনবোধ
তসলিমা নাসরিন



জীবনবোধ জন্ম থেকে একটু একটু করে জন্মায়। আমার বোধ এবং অন্যান্যদের বোধ এক নয়। এক পরিবেশে বড়ো হয়েও মানুষের মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়। দুভাইয়ের এক ভাই হতে পারে খুব সৎ। আরেক ভাই অসতের চূড়ান্ত। দু'বোনের এক বোন উদার, অন্য বোন কৃপণ। পরিবেশ এক হলেও, শিক্ষাদীক্ষা এক হলেও, বোধ ভিন্ন ভিন্ন। কেন কোনো জিনিসের ওপর কেউ আকৃষ্ট হয় এবং কেউ হয় না, তা নিয়ে ভাবতে গেলে ভাবনার কোনো শেষ মিলবে না। মানুষের মস্তিষ্কের জটিল কার্যপদ্ধতি নিয়ে এখনো যখন সব জানা যায় না, প্রচুর প্রশ্নের উত্তর তাই পাওয়া সম্ভব নয়।

কিছুটা পারিবারিক এবং সামাজিক পরিমণ্ডল, কিছুটা পড়াশোনা, কিছুটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার জন্য স্বতন্ত্র একটি বোধ গড়ে তোলায় সাহায্য করেছে। আমি লক্ষ করেছি দিন দিন আমার এই বোধটি সমৃদ্ধ হয়েছে। জীবন একটিই এবং এই জীবনটি খুব ছোটো— এই সত্যটি আমি কখনো ভুলে থাকতে চাই না। খুব সহজে এই সত্যটি অনেকে ভুলে থাকে বলে জীবন যেভাবে কাটাতে ইচ্ছে, সেভাবে কাটানোর চেষ্টা তারা করে না। আমি জীবনের রূপ-রস-গন্ধ-বর্ণ সব অকুণ্ঠচিত্তে আকণ্ঠ পান করতে চাই। করিও। জীবনে যা উপার্জন করি, ভবিষ্যতের জন্য কিছুই আমি জমিয়ে রাখি না। বর্তমানেই তা খরচা করি। বর্তমানের মূল্যই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি মুহূর্তই তো অমূল্য। যে-মুহূর্তটি আমি যাপন করছি, সেই মুহূর্তটি আনন্দময় অর্থময় হচ্ছে কি না সেটিই বড়ো।

আমার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ - ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল

আমার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল

হুমায়ূন আহমেদ আমার বড় ভাই। তাকে নিয়ে নৈর্ব্যক্তিকভাবে কিছু লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যেটাই লিখি তার মাঝে ব্যক্তিগত কথা চলে আসবে। আশা করছি পাঠকেরা সেজন্য আমাকে ক্ষমা করবেন।

হুমায়ূন আহমেদ এই দেশের একজন বিখ্যাত মানুষ ছিল, বিখ্যাত মানুষেরা সবসময় দূরের মানুষ হয়। সাধারণ মানুষের কাছে তাদের পৌঁছানোর সুযোগ থাকে না। হুমায়ূন আহমেদ মনে হয় একমাত্র ব্যতিক্রম কম বয়সী তরুণেরা তার বই থেকে বই পড়া শিখেছে, যুবকেরা বৃষ্টি আর জোছনাকে ভালোবাসতে শিখেছে। তরুণীরা অবলীলায় প্রেমে পড়তে শিখেছে। সাধরণ মানুষেরা তার নাটক দেখে কখনো হেসে ব্যাকুল কিংবা কেঁদে আকুল হয়েছে।

অগ্রন্থিত রচনা - হুমায়ুন আহমেদ

অগ্রন্থিত রচনা
হুমায়ুন আহমেদ
সংগ্রহ ও ভূমিকা : পিয়াস মজিদ
আবদুল্লাহ ও শ্রীকান্ত


গ্রন্থসমালোচক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ খুব পরিচিত নন, তবে বাংলা একাডেমির সাহিত্যপত্র উত্তরাধিকার-এর এপ্রিল-জুন ১৯৮৯, বৈশাখ-আষাঢ় ১৯৯৬ (১৭ বর্ষ, ২য় সংখ্যা) সংখ্যায় প্রকাশিত কাজী ইমদাদুল হকের সুখ্যাত আবদুল্লাহ এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী শ্রীকান্ত উপন্যাসের বাংলা একাডেমিকৃত চিরায়ত কিশোর সংস্করণের সমালোচনা সাক্ষ্য দেয় সাহিত্যের এ ক্ষেত্রটিতেও তাঁর স্বাতন্ত্র্যময় পদপাত ছিল। মিতায়তন এ গ্ৰন্থসমালোচনায় দুটাে বিশিষ্ট বাংলা উপন্যাস ছাপিয়ে কথাসাহিত্য বিষয়ে তাঁর একটি সামগ্রিক ধারণাও স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় পাঠকের পটে। আবদুল্লার কিশোর সংস্করণ করেছিলেন প্ৰয়াত লেখক যোবায়দা মীর্জা আর শ্রীকান্ত’র কিশোর সংস্করণ ছিল বিশিষ্ট কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের সম্পাদিত। উল্লেখ করা যেতে পারে উত্তরাধিকার-এর অব্যবহিত পূর্বের সংখ্যা অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ ১৯৮৯-তে তাঁর অন্যতম আলোচিত গল্প ‘খাদক' প্রকাশিত হয়েছিল। তখন এ পত্রিকার সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও রশীদ হায়দার।

বাংলা একাডেমি বেশ কিছু চমৎকার কাজ অতীতে করেছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হলো অমর “চিরায়ত কিশোর গ্রন্থমালা”-কিশোরদের উপযোগী করে লেখা চিরায়ত সাহিত্যের অমর রচনাবলী। কৈশোর হচ্ছে বই পড়ার সবচেয়ে সুন্দর সময়। তখন মন থাকে তাজা । আবেগ ও কল্পনায় হৃদয় থাকে পূর্ণ। সাহিত্যের সুবিশাল উত্তরাধিকার-চিরায়ত সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয়ের জন্যে এই সময়টাই হচ্ছে মাহেন্দ্ৰক্ষণ। কৈশোরের পর আমরা নিজের সময় নিয়ে বড় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফিরে তাকানোর অবসর আর হয় না। আমাদের মধ্যে অনেকেই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বইগুলি পড়েছেন কৈশোরে। তারপর আর পড়তে পারেন নি-সময়ের অভাব, সুযোগের অভাব এবং খানিকটা হয়তো সময় হয় তবে তা হয় শেষ জীবনে। তখন চােখের দৃষ্টি হয় ক্ষীণ, নানান আধি-ব্যাধিতে মন থাকে ক্লান্ত-কোনো মহৎ সাহিত্যই তখন আর স্থবির মনকে তেমনভাবে আকৃষ্ট করতে পারে না। চিরায়ত গ্রন্থমালা কিশোরদের উপযোগী করে প্রকাশ-এই কারণেই আমার চোখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলা একাডেমিকে আমি আমার নিজের পক্ষ থেকে এবং এ দেশের কিশোরকিশোরীদের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি অভিনন্দন।

বাংলা বইয়ের দুঃখ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বাংলা বইয়ের দুঃখ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

কুমার মুনীন্দ্রদেব রায় মহাশয়ের বক্তৃতা শুনে আর কিছু না হোক অন্ততঃ একটি উপকার আমরা পেয়েছি। ইউরোপের নানা গ্রন্থাগার সম্বন্ধে তিনি যা বললেন হয়ত তার অনেক কথাই আমাদের মনে থাকবে না। কিন্তু আজ তাঁর বক্তৃতা শুনে আমাদের মনে জেগেছে একটা আকুলতা। ইউরোপের গ্রন্থাগারের অবস্থা যে-রকম উন্নত, সে-রকম অবস্থা যে আমাদের দেশে কবে হবে—তা কল্পনাও করা যায় না। তবে যেটুকু হওয়া সম্ভব, তার জন্যে আমাদের চেষ্টা করা উচিত। চারিদিক থেকে অভিযোগ ওঠে, আমাদের গ্রন্থাগারে ভাল বই নেই,—আছে কেবল বাজে নভেল। আমাদের লেখকেরা জ্ঞানগর্ভ বই লেখেন না। তাঁরা কেবল গল্প লেখেন। কিন্তু তাঁরা লিখবেন কোথা থেকে? এই অতিনিন্দিত গল্পলেখকদের দৈন্যের সীমা নেই। অনেকেরই উপন্যাসের হয়ত দ্বিতীয় সংস্করণ হয় না। যা বা লাভ হয় সে যে কার গর্ভে গিয়ে ঢোকে তা না বলাই ভাল। অনেকের হয়ত ধারণাই নেই যে, এই-সব লেখক-সম্প্রদায় কত নিঃস্ব, কত নিঃসহায়।

মার্কস কি মার্কসবাদী ছিলেন? - হায়দার আকবর খান রনো

মার্কস কি মার্কসবাদী ছিলেন?
হায়দার আকবর খান রনো

কার্ল মার্কসের জীবদ্দশা থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর বক্তব্য ও তত্ত্বকে বিকৃত করে এমনভাবে পরিবেশন করা যাতে মনে হয় বিকৃতটাই মার্কসীয় তত্ত্ব। প্রবণতাটা এখনও আছে। মার্কসকে যারা ভালভাবে অধ্যয়ন করেন নি তাদেরকে সহজেই একটা বুঝ দেয়া যায় যে, মার্কসবাদ কোন প্রমাণিত ও বিশ্বাসযোগ্য মতবাদ নয়। আরও বলা হয় যে, মার্কসবাদ এখন প্রাচীন হয়ে গেছে, বর্তমান যুগে সে অচল। উনবিংশ শতাব্দীর বিপ্লবের তত্ত্ব এখন নাকি বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায় না, ইত্যাদি। আমি এই রচনার সংক্ষিপ্ত পরিসরে মার্কস সংক্রান্ত বহুবিধ প্রচলিত ভুল ধারণা খণ্ডন করার চেষ্টা করছি না। টেরি ইংগলটন একটি গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন। Why Marx was Right এই শিরোনামে। সেখানে তিনি এই রকম কয়েকটি ভুল ধারণা খণ্ডন করেছেন খুবই কার্যকর যুক্তি ও তথ্য সহকারে। আগ্রহী মার্কসবাদী কর্মীদের আমি বইটি পাঠ করার জন্য অনুরোধ করবো।
প্রকাশক : রিটন খান, সম্পাদকমন্ডলী : এমরান হোসেন রাসেল, রিটন খান
Copyright © 2020. All rights reserved by বইয়ের হাট