ও, এবার বুঝি আমি বাংলাদেশি?
লেখক: জিয়া হায়দার রহমান
অনুবাদ : আশফাক স্বপন
প্রথম প্রকাশ কালি ও কলম আগস্ট ২০১৯
[যে-জনগোষ্ঠী অন্যরকম, সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ থেকে ভিন্ন, তার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার সারাবিশ্বে রাজনৈতিক পরিম-লকে ভয়াবহ সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। এই হিংস্র ভেদবুদ্ধিতে ভর করে মার্কিন দেশে ট্রাম্প, বিলেতে ব্রেক্সিটপন্থিরা, পূর্ব ইউরোপে নানান দেশের ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী ডানপন্থীরা এবং পশ্চিম ইউরোপে বর্ণবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ভিন্ন বর্ণের অভিবাসীর জ্বালা যে কী বিষময়, সেটা নিয়ে ২০১৬ সালে লেখা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের এই ক্রুদ্ধ প্রবন্ধটি এখনো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জিয়া হায়দার রহমানের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস In the Light of What We Know সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। – অনুবাদক]
কুড়ি বছর আগে নিউইয়র্কের লোকে যখন আমায় জিজ্ঞেস করত, আমি কোথাকার লোক, আমি স্রেফ বলতাম, আমি বিলেতে বড় হয়েছি। বাংলাদেশে জন্ম হয়েছে বললে আরো একগাদা প্রশ্ন আসবে, তাছাড়া নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল, আমার সাংস্কৃতিক বিশিষ্টতা অর্থাৎ আমার বিলেতি উচ্চারণ – সেটার উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া।
এই খাস বিলেতি উচ্চারণ সেকালের ক্যাসেট রেকর্ডারে ধারণকৃত বিবিসি সংবাদ-পাঠকদের অনুকরণ করে শেখা। ছোটবেলায় লাখ লাখ ইহুদি নিধনের কাহিনি পড়ার পর আতঙ্কিত হয়েছি; শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা যদি নিজেদের এত কাছাকাছি একটা জনগোষ্ঠীর
এ-অবস্থা করে, না জানি আমার কী দশা করবে।
তাই আমি খাপ খাইয়ে, তাল মিলিয়ে চলতে শিখেছি। উদ্দেশ্য এসব মানুষ, যারা জাতিগত বিভিন্নতায় এত অসোয়াস্তিতে ভোগে, তাদের কাছে যেন আরেকটু কম বিজাতীয় বলে প্রতীয়মান হই। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, আমি এমন একটা ব্রিটেনে বড় হয়েছি, যে ব্রিটেন অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি অবজ্ঞায় ঘৃণায় থুথু মেরেছে, আমাদের ঠেঙিয়েছে, দেয়ালে নাৎসি স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকেছে।
ব্রিটেন স্বজাতীয়দের ঘরের শত্রম্ন বিভীষণের ভয় দেখায়। অভিবাসীদের বলে, মূলস্রোতে মিলেমিশে যাও, বিলেতি মূল্যবোধ আত্মস্থ করো। এই কাজটি করো, তোমার সম্মান বাড়বে। কিন্তু এই প্রতিশ্রম্নতির পুরোটাই ফাঁকি, কারণ প্রতিশ্রম্নতি পূরণের কোনো ইচ্ছাই ব্রিটেনের নেই।
সম্প্রতি আমাকে PEN Pinter Prize পাওয়া নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টারের সম্মানে নামাঙ্কিত বিলেতের PEN পুরস্কারের বিচারকম-লীতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই পুরস্কার এমন একজন লেখককে দেওয়া হবে, যিনি বিশ্বকে ‘নিঃসংকোচ, অবিচল দৃষ্টিতে’ দেখেন, ‘তীব্র দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বুদ্ধিবৃত্তি’ দিয়ে ‘আমাদের সমাজ ও জীবনের আসল সত্যকে’ শনাক্ত করেন। সালমান রুশদি ও নাট্যকার টম স্টপার্ড আগে এ-পুরস্কার পেয়েছেন।
বিচারকম-লীর ঘোষণায় Times Literary Supplement-এর সম্পাদক পিটার স্টোথার্ডের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঘোষণায় আমার পরিচিতি এরকম : ‘জিয়া হায়দার রহমানের জন্ম বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে, লেখাপড়া করেন অক্সফোর্ডের বেলিয়ল কলেজে, এবং আরো শিক্ষালাভ করেন ক্যামব্রিজ, মিউনিখ ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিনিয়োগ ব্যাংকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।’
ম্যান বুকার পুরস্কার কর্তৃপক্ষ স্টোথার্ডকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বিবৃতি দিলো। তিনি একসময় বুকার পুরস্কারের বিচারক ছিলেন। বিবৃতিতে আরো দুজনের কথা উল্লেলখ করা হয় : ‘রয়াল কোর্ট থিয়েটারের সামগ্রিক শিল্পকলা-পরিচালক ভিকি ফেদারস্টোন, এবং বাংলাদেশি ব্যাংকার ঔপন্যাসিক জিয়া হায়দার রহমান।’
আমার সঙ্গে বিচারকম-লীতে আর যাঁরা সদস্য, তাঁদের নাগরিকত্ব কী সে-বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। ম্যান বুকার সে-বিষয়ে কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি। তবে আমি যে বাংলাদেশি, সে-কথা জেনে বিস্মিত হলাম। আমার বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্ট নেই, তবে ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে বটে। একটা নয়, দু-দুটো, সম্পূর্ণ আইনসংগতভাবে (অহিনকুল সম্পর্ক এমন দুটি দেশ যেমন ইসরায়েল ও জর্ডানে ভ্রমণের জন্য)।
বোঝা গেল, দুটো পাসপোর্ট থাকায় আমি দ্বিগুণ ব্রিটিশ হতে পারিনি। তবে ব্রিটিশ সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার একটা প্রভাবশালী অংশ আমাকে যদি বাংলাদেশি বলে, আমি যে সত্যিই তাই তার যথেষ্ট কারণ থাকবে তো? তা না হলে এই ভুলের কারণ কী? আমরা কি ধরে নেব লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক যে উপনিবেশোত্তর নানান দেশে জন্ম নিয়েছে, বা তাদের উত্তরসূরি, সে-বিষয়ে এরা অজ্ঞ? অবশ্য আমাকে বাংলাদেশি বলার একটা সুবিধা হলো কিছু লোক এবার আমাকে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ধমকাতে পারে।
আমি নিজেকে কী বলে অভিহিত করতে চাই সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হলো এদেশের আপাত শিক্ষিত ব্রিটিশ মানুষ অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিকদের কী বলে অভিহিত করতে চায়। মানুষের ভিন্নতা নিয়েই ব্রিটেনের সমস্যা।
এই সমস্যা এককভাবে ব্রিটেনের নয়, ইউরোপীয় সংঘ থেকে বের হওয়ার জন্য গণভোট নিয়ে ব্রেক্সিট আন্দোলন আজ ব্রিটেনে ইউরোপীয়দের প্রতি জঘন্য বিদ্বেষের চোরাস্রোত সবার কাছে উন্মোচিত করে দিয়েছে বটে; কিন্তু ইউরোপীয় মূল মহাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের একটা মিলও রয়েছে।
সম্প্রতি ওলন্দাজ টেলিভিশনে Buitenhof নামে একটি রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানে আমি বলেছি, ইউরোপের ঔপনিবেশিক ইতিহাস তার অমত্মঃকরণে একটা কলঙ্কচিহ্ন এঁকে দিয়েছে, সেটা হলো বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ। অনুষ্ঠানের পর গতানুগতিক বর্ণবাদী চিঠিপত্র ছাড়াও অশ্বেতাঙ্গ ওলন্দাজ মানুষের কাছ থেকেও বার্তা এসেছে, যার মোদ্দা কথা একটাই। অনুষ্ঠানে যে আমি বলেছি ব্রিটেনের অবস্থা আরো খারাপ সেটা নাকি বলা প্রয়োজন ছিল না। নেদারল্যান্ডসেও অবস্থা একই রকম খারাপ। ইউরোপে অভিবাসীদের জন্য জীবন মানে প্রতিদিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আক্রমণ, তারা যে বহিরাগত সেটার নানান প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত, এসব মোকাবেলা করা।
গত কয়েক মাস আমাকে অ্যামস্টারডামে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা হয়েছে। এখানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি আবাসিক লেখক। আমার উপন্যাসের কাটতি এখানে খুব ভালো। গত মাসে আমি Boekenbale বলে ওলন্দাজ প্রকাশনা শিল্পের একটা বার্ষিক উৎসবে গিয়েছি। শুনলাম এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো উৎসবে কে কে প্রবেশাধিকার পাওয়ার যোগ্য সেই সম্বন্ধে গুজব উৎপাদন করা। অর্থাৎ একটা বিশিষ্ট, বাছাই গোষ্ঠী তৈরি করা।
আমার প্রকাশক অনুষ্ঠানের আগে এক রেসেত্মারাঁয় নৈশভোজের নিমন্ত্রণ করলেন। মাঝপথে আমার কোটের কথা মনে পড়ল – আসার পর কোথাও কোটটা রেখে আমি তার কথা ভুলে গেছি। একজন কর্মচারী আর আমি মিলে সেটা উদ্ধার করলাম। তার মধ্যে মূল্যবান জিনিসপত্র সব ঠিকঠাক ছিল। আমি ধন্যবাদ জানালাম।
‘আপনাকে এখানে পাওয়া আমাদের আনন্দ।’ উত্তরে তিনি জানালেন। কথাটা একটু কানে বাজল। ভাবলাম অনুবাদের কারণেই হয়তোবা।
‘না স্যার’, এবার স্বর নিচু। ‘বলতে চাইছি আপনাকে এখানে পাওয়া আমাদের জন্য সম্মানের ব্যাপার।’ লোকটার দিকে আবার তাকালাম। ‘আমি আপনাকে গত সপ্তাহে ‘Buitenhof’ অনুষ্ঠানে দেখেছি। আপনার কথা একদম ঠিক। তবে ওলন্দাজরা কিছু বোঝে না, কারণ তারা দেখেও দেখতে চায় না।’
‘আপনার নাম কী?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘এমিল’, আমার সঙ্গে করমর্দন করতে করতে বললেন। ‘কাজের সময় আমি এই নাম ব্যবহার করি। আমার বাবা-মা মিসরের। আমার জন্ম নেদারল্যান্ডসে। আমি এখানে সুরা বিশেষজ্ঞ। সুরা সম্বন্ধে যা কিছু জানার আছে সব আমার নখদর্পণে।’
‘আমি খুব ভালো ডাচ ভাষা বলি,’ তিনি ইংরেজিতে বলতে লাগলেন। ‘ওলন্দাজ সংস্কৃতি সম্বন্ধে বেশিরভাগ ওলন্দাজ লোকের চেয়ে আমার জ্ঞান বেশি। আমি ডাচ, কিন্তু আমাকে কিছুতেই এরা ডাচ হিসেবে গ্রহণ করবে না।’
এই কথোপকথন আমার মনে গভীরভাবে দাগ কাটল। আমি অ্যামস্টারডামের ঠান্ডা নিশীথে বেরিয়ে পড়লাম মনকে শান্ত করার জন্য।
আজকাল নিউইয়র্কের লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি কোথাকার লোক, মাঝে মাঝে আমার কী খেয়াল হয়, আমি বলি ‘আমার বাংলাদেশে জন্ম।’ প্রায় কোনোবারই এই উত্তরে মানুষ নিবৃত্ত হয় না। আমার বাচনভঙ্গি শুনে বলে, ‘বুঝলাম, কিন্তু আসলে তো আপনি ব্রিটিশ, তাই না?’ নিউইয়র্কের লোকের জয় হোক! এই কথাটা শুনতে আমাকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে হয়।
আমি মানিয়ে চলতে শিখেছি। কিন্তু যখন আমার শৈশবের পাড়ার মতো হতদরিদ্র পাড়া অথবা ইস্ট লন্ডনের বঞ্চিত অঞ্চলের যে-স্কুলের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ছিলাম সেই স্কুল – এসব এলাকার শিশুদের কথা ভাবি, তখন উপলব্ধি করি যে, ঔপন্যাসিকের মতো জনসমাজের অন্তরালে আশ্রয়গ্রহণ নীতিভঙ্গের শামিল।
চিন্তাভাবনার প্রতিটি সংঘাত ঘটে ভাষার রণাঙ্গনে। শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ লোকের কাছে যুক্ত পরিচয় – বাংলাদেশি-ব্রিটিশ, পাকিস্তানি-ব্রিটিশ – শুধু বিভিন্নতাকে প্রকট করে তোলে। এই নব্য পরিচয়কে একটি বহু-সাংস্কৃতিক রামধনু-সদৃশ রাষ্ট্রের নতুন সংযোজন হিসেবে স্বাগত জানানোর পরিবর্তে উভয়পক্ষই এই যুক্ত পরিচিতিকে অপরপক্ষের প্রতি সাংস্কৃতিক ছাড় হিসেবেই দেখে।
শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিকের জাতীয়তা নিয়ে মুখোমুখি, সরাসরি কথা বলতে আড়ষ্টতা অনুভব করে। ইতসত্মত পা নাড়ানো, গলা খাঁকারি দেওয়া, চোখে চোখ রাখতে সংকোচ – নানান ইঙ্গিতে সেটা ধরা পড়ে যায়। যুক্তচিহ্ন দিয়ে পরিচয় নির্দেশ ব্যাপারটা গোলমেলে, বেখাপ্পা; আবার এমনতরো কাউকে শুধু ব্রিটিশ বলে অভিহিত করা যেন ঠিক যথেষ্ট শাণিত নয়। ব্রিটিশদের রয়েছে ইতিহাস, বাংলাদেশি-ব্রিটিশদের সম্বল যুক্ত পরিচয়ের যতিচিহ্ন।
মানুষের গোষ্ঠীগত ভিন্নতা নিয়ে ব্রিটেনের অমত্মঃস্থ সাংস্কৃতিক জটিলতার কারণেই স্বজাতীয় ব্রিটিশের পক্ষে আমাকে ব্রিটিশ বলে অভিহিত করতে এতো কষ্ট হয়। সরল বিশ্বাসে যাদের সচেতনতা নিয়ে আশাবাদী হয়েছি, কষ্ট হয় তাদেরও।
আমি তো ব্রিটেনেই বড় হয়েছি; আমার পাসপোর্ট ব্রিটিশ, বাংলাদেশি নয়; আমি আদপেই বাংলা বলি না; সৎ নাগরিক হওয়ার সদ্ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ পড়শির আইকিয়া খাট জুড়তে সাহায্য করি, আরেকজনের পুরনো লাইলাক গাছ উপড়াতে সাহায্য করি; ব্রিটেনে আমার লেখাপড়া, ব্রিটেনই কর্মক্ষেত্র; ‘এই শরীর ইংল্যান্ডের, প্রতি শ্বাসে ইংল্যান্ডের বাতাস/ এর নদীর জলে বিধৌত, এই স্বদেশের সূর্যালোকে ধন্য’*; স্থানীয় গির্জার গৃহহীনদের সাহায্যার্থে চাঁদা তোলার অনুষ্ঠানে বাসনপত্র ধুয়ে দিই (কারণ ধর্মমত যাই হোক, আমরা তো সবাই নিশ্চিতভাবে সামূহিক সামাজিক আত্মীয়তার ধারণায় বিশ্বাসী); এবং আবারো বলি – এই কথা পুনরুচ্চারণের প্রয়োজন রয়েছে – আমার ব্রিটিশ পাসপোর্টে ‘বিনা বাধায়’ কথাটার উল্লেলখ রয়েছে তবু আপনি আমাকে ব্রিটিশ বলে স্বীকার করবেন না? এরপর আমি যদি আপনার সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় পোষণ করি, বাক্সপ্যাঁটরা বেঁধে দেশ থেকে পালাই, আপনি আশ্চর্য হবেন না।
আর কাঁহাতক আমি আপনাদের সঙ্গে মিলেমিশে যাব? আর কী চান আমাদের কাছে? শ্বেতাঙ্গ হতে হবে? ঠিক হুবহু আপনি হয়ে যাব?
নিউইয়র্ক টাইমস; এপ্রিল ৮, ২০১৬
মূল ইংরেজি প্রবন্ধে উলিস্নলখিত পঙ্ক্তি :
‘a body of England’s, breathing English air/ Washed by the rivers, blest by suns of home’
সম্পূর্ণ কবিতা এখানে : https://www.bartleby.com/103/149.html
মূল ইংরেজি নিবন্ধ
https://www.nytimes.com/2016/04/10/opinion/oh-so-now-im-bangladeshi.html?searchResultPosition = 9জিয়া হায়দার রহমান সম্বন্ধে New Yorker সাময়িকীতে মূল্যায়ন
https://www.newyorker.com/magazine/2014/05/19/the-world-as-we-know-itThe New York Times-এ তাঁর উপন্যাসের সমালোচনা
https://www.nytimes.com/2014/04/13/books/review/in-the-light-of-what-we-know-by-zia-haider-rahman.html?_r = 0
লেখক: জিয়া হায়দার রহমান
অনুবাদ : আশফাক স্বপন
প্রথম প্রকাশ কালি ও কলম আগস্ট ২০১৯
[যে-জনগোষ্ঠী অন্যরকম, সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ থেকে ভিন্ন, তার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার সারাবিশ্বে রাজনৈতিক পরিম-লকে ভয়াবহ সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। এই হিংস্র ভেদবুদ্ধিতে ভর করে মার্কিন দেশে ট্রাম্প, বিলেতে ব্রেক্সিটপন্থিরা, পূর্ব ইউরোপে নানান দেশের ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী ডানপন্থীরা এবং পশ্চিম ইউরোপে বর্ণবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ভিন্ন বর্ণের অভিবাসীর জ্বালা যে কী বিষময়, সেটা নিয়ে ২০১৬ সালে লেখা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের এই ক্রুদ্ধ প্রবন্ধটি এখনো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। জিয়া হায়দার রহমানের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস In the Light of What We Know সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। – অনুবাদক]
কুড়ি বছর আগে নিউইয়র্কের লোকে যখন আমায় জিজ্ঞেস করত, আমি কোথাকার লোক, আমি স্রেফ বলতাম, আমি বিলেতে বড় হয়েছি। বাংলাদেশে জন্ম হয়েছে বললে আরো একগাদা প্রশ্ন আসবে, তাছাড়া নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল, আমার সাংস্কৃতিক বিশিষ্টতা অর্থাৎ আমার বিলেতি উচ্চারণ – সেটার উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া।
এই খাস বিলেতি উচ্চারণ সেকালের ক্যাসেট রেকর্ডারে ধারণকৃত বিবিসি সংবাদ-পাঠকদের অনুকরণ করে শেখা। ছোটবেলায় লাখ লাখ ইহুদি নিধনের কাহিনি পড়ার পর আতঙ্কিত হয়েছি; শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা যদি নিজেদের এত কাছাকাছি একটা জনগোষ্ঠীর
এ-অবস্থা করে, না জানি আমার কী দশা করবে।
তাই আমি খাপ খাইয়ে, তাল মিলিয়ে চলতে শিখেছি। উদ্দেশ্য এসব মানুষ, যারা জাতিগত বিভিন্নতায় এত অসোয়াস্তিতে ভোগে, তাদের কাছে যেন আরেকটু কম বিজাতীয় বলে প্রতীয়মান হই। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, আমি এমন একটা ব্রিটেনে বড় হয়েছি, যে ব্রিটেন অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি অবজ্ঞায় ঘৃণায় থুথু মেরেছে, আমাদের ঠেঙিয়েছে, দেয়ালে নাৎসি স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকেছে।
ব্রিটেন স্বজাতীয়দের ঘরের শত্রম্ন বিভীষণের ভয় দেখায়। অভিবাসীদের বলে, মূলস্রোতে মিলেমিশে যাও, বিলেতি মূল্যবোধ আত্মস্থ করো। এই কাজটি করো, তোমার সম্মান বাড়বে। কিন্তু এই প্রতিশ্রম্নতির পুরোটাই ফাঁকি, কারণ প্রতিশ্রম্নতি পূরণের কোনো ইচ্ছাই ব্রিটেনের নেই।
সম্প্রতি আমাকে PEN Pinter Prize পাওয়া নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টারের সম্মানে নামাঙ্কিত বিলেতের PEN পুরস্কারের বিচারকম-লীতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই পুরস্কার এমন একজন লেখককে দেওয়া হবে, যিনি বিশ্বকে ‘নিঃসংকোচ, অবিচল দৃষ্টিতে’ দেখেন, ‘তীব্র দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বুদ্ধিবৃত্তি’ দিয়ে ‘আমাদের সমাজ ও জীবনের আসল সত্যকে’ শনাক্ত করেন। সালমান রুশদি ও নাট্যকার টম স্টপার্ড আগে এ-পুরস্কার পেয়েছেন।
বিচারকম-লীর ঘোষণায় Times Literary Supplement-এর সম্পাদক পিটার স্টোথার্ডের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঘোষণায় আমার পরিচিতি এরকম : ‘জিয়া হায়দার রহমানের জন্ম বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে, লেখাপড়া করেন অক্সফোর্ডের বেলিয়ল কলেজে, এবং আরো শিক্ষালাভ করেন ক্যামব্রিজ, মিউনিখ ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিনিয়োগ ব্যাংকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।’
ম্যান বুকার পুরস্কার কর্তৃপক্ষ স্টোথার্ডকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বিবৃতি দিলো। তিনি একসময় বুকার পুরস্কারের বিচারক ছিলেন। বিবৃতিতে আরো দুজনের কথা উল্লেলখ করা হয় : ‘রয়াল কোর্ট থিয়েটারের সামগ্রিক শিল্পকলা-পরিচালক ভিকি ফেদারস্টোন, এবং বাংলাদেশি ব্যাংকার ঔপন্যাসিক জিয়া হায়দার রহমান।’
আমার সঙ্গে বিচারকম-লীতে আর যাঁরা সদস্য, তাঁদের নাগরিকত্ব কী সে-বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। ম্যান বুকার সে-বিষয়ে কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি। তবে আমি যে বাংলাদেশি, সে-কথা জেনে বিস্মিত হলাম। আমার বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্ট নেই, তবে ব্রিটিশ পাসপোর্ট রয়েছে বটে। একটা নয়, দু-দুটো, সম্পূর্ণ আইনসংগতভাবে (অহিনকুল সম্পর্ক এমন দুটি দেশ যেমন ইসরায়েল ও জর্ডানে ভ্রমণের জন্য)।
বোঝা গেল, দুটো পাসপোর্ট থাকায় আমি দ্বিগুণ ব্রিটিশ হতে পারিনি। তবে ব্রিটিশ সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার একটা প্রভাবশালী অংশ আমাকে যদি বাংলাদেশি বলে, আমি যে সত্যিই তাই তার যথেষ্ট কারণ থাকবে তো? তা না হলে এই ভুলের কারণ কী? আমরা কি ধরে নেব লাখ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক যে উপনিবেশোত্তর নানান দেশে জন্ম নিয়েছে, বা তাদের উত্তরসূরি, সে-বিষয়ে এরা অজ্ঞ? অবশ্য আমাকে বাংলাদেশি বলার একটা সুবিধা হলো কিছু লোক এবার আমাকে নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ধমকাতে পারে।
আমি নিজেকে কী বলে অভিহিত করতে চাই সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হলো এদেশের আপাত শিক্ষিত ব্রিটিশ মানুষ অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিকদের কী বলে অভিহিত করতে চায়। মানুষের ভিন্নতা নিয়েই ব্রিটেনের সমস্যা।
এই সমস্যা এককভাবে ব্রিটেনের নয়, ইউরোপীয় সংঘ থেকে বের হওয়ার জন্য গণভোট নিয়ে ব্রেক্সিট আন্দোলন আজ ব্রিটেনে ইউরোপীয়দের প্রতি জঘন্য বিদ্বেষের চোরাস্রোত সবার কাছে উন্মোচিত করে দিয়েছে বটে; কিন্তু ইউরোপীয় মূল মহাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের একটা মিলও রয়েছে।
সম্প্রতি ওলন্দাজ টেলিভিশনে Buitenhof নামে একটি রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানে আমি বলেছি, ইউরোপের ঔপনিবেশিক ইতিহাস তার অমত্মঃকরণে একটা কলঙ্কচিহ্ন এঁকে দিয়েছে, সেটা হলো বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ। অনুষ্ঠানের পর গতানুগতিক বর্ণবাদী চিঠিপত্র ছাড়াও অশ্বেতাঙ্গ ওলন্দাজ মানুষের কাছ থেকেও বার্তা এসেছে, যার মোদ্দা কথা একটাই। অনুষ্ঠানে যে আমি বলেছি ব্রিটেনের অবস্থা আরো খারাপ সেটা নাকি বলা প্রয়োজন ছিল না। নেদারল্যান্ডসেও অবস্থা একই রকম খারাপ। ইউরোপে অভিবাসীদের জন্য জীবন মানে প্রতিদিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আক্রমণ, তারা যে বহিরাগত সেটার নানান প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত, এসব মোকাবেলা করা।
গত কয়েক মাস আমাকে অ্যামস্টারডামে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে রাখা হয়েছে। এখানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের আমি আবাসিক লেখক। আমার উপন্যাসের কাটতি এখানে খুব ভালো। গত মাসে আমি Boekenbale বলে ওলন্দাজ প্রকাশনা শিল্পের একটা বার্ষিক উৎসবে গিয়েছি। শুনলাম এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হলো উৎসবে কে কে প্রবেশাধিকার পাওয়ার যোগ্য সেই সম্বন্ধে গুজব উৎপাদন করা। অর্থাৎ একটা বিশিষ্ট, বাছাই গোষ্ঠী তৈরি করা।
আমার প্রকাশক অনুষ্ঠানের আগে এক রেসেত্মারাঁয় নৈশভোজের নিমন্ত্রণ করলেন। মাঝপথে আমার কোটের কথা মনে পড়ল – আসার পর কোথাও কোটটা রেখে আমি তার কথা ভুলে গেছি। একজন কর্মচারী আর আমি মিলে সেটা উদ্ধার করলাম। তার মধ্যে মূল্যবান জিনিসপত্র সব ঠিকঠাক ছিল। আমি ধন্যবাদ জানালাম।
‘আপনাকে এখানে পাওয়া আমাদের আনন্দ।’ উত্তরে তিনি জানালেন। কথাটা একটু কানে বাজল। ভাবলাম অনুবাদের কারণেই হয়তোবা।
‘না স্যার’, এবার স্বর নিচু। ‘বলতে চাইছি আপনাকে এখানে পাওয়া আমাদের জন্য সম্মানের ব্যাপার।’ লোকটার দিকে আবার তাকালাম। ‘আমি আপনাকে গত সপ্তাহে ‘Buitenhof’ অনুষ্ঠানে দেখেছি। আপনার কথা একদম ঠিক। তবে ওলন্দাজরা কিছু বোঝে না, কারণ তারা দেখেও দেখতে চায় না।’
‘আপনার নাম কী?’ জিজ্ঞেস করলাম।
‘এমিল’, আমার সঙ্গে করমর্দন করতে করতে বললেন। ‘কাজের সময় আমি এই নাম ব্যবহার করি। আমার বাবা-মা মিসরের। আমার জন্ম নেদারল্যান্ডসে। আমি এখানে সুরা বিশেষজ্ঞ। সুরা সম্বন্ধে যা কিছু জানার আছে সব আমার নখদর্পণে।’
‘আমি খুব ভালো ডাচ ভাষা বলি,’ তিনি ইংরেজিতে বলতে লাগলেন। ‘ওলন্দাজ সংস্কৃতি সম্বন্ধে বেশিরভাগ ওলন্দাজ লোকের চেয়ে আমার জ্ঞান বেশি। আমি ডাচ, কিন্তু আমাকে কিছুতেই এরা ডাচ হিসেবে গ্রহণ করবে না।’
এই কথোপকথন আমার মনে গভীরভাবে দাগ কাটল। আমি অ্যামস্টারডামের ঠান্ডা নিশীথে বেরিয়ে পড়লাম মনকে শান্ত করার জন্য।
আজকাল নিউইয়র্কের লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি কোথাকার লোক, মাঝে মাঝে আমার কী খেয়াল হয়, আমি বলি ‘আমার বাংলাদেশে জন্ম।’ প্রায় কোনোবারই এই উত্তরে মানুষ নিবৃত্ত হয় না। আমার বাচনভঙ্গি শুনে বলে, ‘বুঝলাম, কিন্তু আসলে তো আপনি ব্রিটিশ, তাই না?’ নিউইয়র্কের লোকের জয় হোক! এই কথাটা শুনতে আমাকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে হয়।
আমি মানিয়ে চলতে শিখেছি। কিন্তু যখন আমার শৈশবের পাড়ার মতো হতদরিদ্র পাড়া অথবা ইস্ট লন্ডনের বঞ্চিত অঞ্চলের যে-স্কুলের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ছিলাম সেই স্কুল – এসব এলাকার শিশুদের কথা ভাবি, তখন উপলব্ধি করি যে, ঔপন্যাসিকের মতো জনসমাজের অন্তরালে আশ্রয়গ্রহণ নীতিভঙ্গের শামিল।
চিন্তাভাবনার প্রতিটি সংঘাত ঘটে ভাষার রণাঙ্গনে। শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ লোকের কাছে যুক্ত পরিচয় – বাংলাদেশি-ব্রিটিশ, পাকিস্তানি-ব্রিটিশ – শুধু বিভিন্নতাকে প্রকট করে তোলে। এই নব্য পরিচয়কে একটি বহু-সাংস্কৃতিক রামধনু-সদৃশ রাষ্ট্রের নতুন সংযোজন হিসেবে স্বাগত জানানোর পরিবর্তে উভয়পক্ষই এই যুক্ত পরিচিতিকে অপরপক্ষের প্রতি সাংস্কৃতিক ছাড় হিসেবেই দেখে।
শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ অশ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ নাগরিকের জাতীয়তা নিয়ে মুখোমুখি, সরাসরি কথা বলতে আড়ষ্টতা অনুভব করে। ইতসত্মত পা নাড়ানো, গলা খাঁকারি দেওয়া, চোখে চোখ রাখতে সংকোচ – নানান ইঙ্গিতে সেটা ধরা পড়ে যায়। যুক্তচিহ্ন দিয়ে পরিচয় নির্দেশ ব্যাপারটা গোলমেলে, বেখাপ্পা; আবার এমনতরো কাউকে শুধু ব্রিটিশ বলে অভিহিত করা যেন ঠিক যথেষ্ট শাণিত নয়। ব্রিটিশদের রয়েছে ইতিহাস, বাংলাদেশি-ব্রিটিশদের সম্বল যুক্ত পরিচয়ের যতিচিহ্ন।
মানুষের গোষ্ঠীগত ভিন্নতা নিয়ে ব্রিটেনের অমত্মঃস্থ সাংস্কৃতিক জটিলতার কারণেই স্বজাতীয় ব্রিটিশের পক্ষে আমাকে ব্রিটিশ বলে অভিহিত করতে এতো কষ্ট হয়। সরল বিশ্বাসে যাদের সচেতনতা নিয়ে আশাবাদী হয়েছি, কষ্ট হয় তাদেরও।
আমি তো ব্রিটেনেই বড় হয়েছি; আমার পাসপোর্ট ব্রিটিশ, বাংলাদেশি নয়; আমি আদপেই বাংলা বলি না; সৎ নাগরিক হওয়ার সদ্ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ পড়শির আইকিয়া খাট জুড়তে সাহায্য করি, আরেকজনের পুরনো লাইলাক গাছ উপড়াতে সাহায্য করি; ব্রিটেনে আমার লেখাপড়া, ব্রিটেনই কর্মক্ষেত্র; ‘এই শরীর ইংল্যান্ডের, প্রতি শ্বাসে ইংল্যান্ডের বাতাস/ এর নদীর জলে বিধৌত, এই স্বদেশের সূর্যালোকে ধন্য’*; স্থানীয় গির্জার গৃহহীনদের সাহায্যার্থে চাঁদা তোলার অনুষ্ঠানে বাসনপত্র ধুয়ে দিই (কারণ ধর্মমত যাই হোক, আমরা তো সবাই নিশ্চিতভাবে সামূহিক সামাজিক আত্মীয়তার ধারণায় বিশ্বাসী); এবং আবারো বলি – এই কথা পুনরুচ্চারণের প্রয়োজন রয়েছে – আমার ব্রিটিশ পাসপোর্টে ‘বিনা বাধায়’ কথাটার উল্লেলখ রয়েছে তবু আপনি আমাকে ব্রিটিশ বলে স্বীকার করবেন না? এরপর আমি যদি আপনার সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় পোষণ করি, বাক্সপ্যাঁটরা বেঁধে দেশ থেকে পালাই, আপনি আশ্চর্য হবেন না।
আর কাঁহাতক আমি আপনাদের সঙ্গে মিলেমিশে যাব? আর কী চান আমাদের কাছে? শ্বেতাঙ্গ হতে হবে? ঠিক হুবহু আপনি হয়ে যাব?
নিউইয়র্ক টাইমস; এপ্রিল ৮, ২০১৬
মূল ইংরেজি প্রবন্ধে উলিস্নলখিত পঙ্ক্তি :
‘a body of England’s, breathing English air/ Washed by the rivers, blest by suns of home’
সম্পূর্ণ কবিতা এখানে : https://www.bartleby.com/103/149.html
মূল ইংরেজি নিবন্ধ
https://www.nytimes.com/2016/04/10/opinion/oh-so-now-im-bangladeshi.html?searchResultPosition = 9জিয়া হায়দার রহমান সম্বন্ধে New Yorker সাময়িকীতে মূল্যায়ন
https://www.newyorker.com/magazine/2014/05/19/the-world-as-we-know-itThe New York Times-এ তাঁর উপন্যাসের সমালোচনা
https://www.nytimes.com/2014/04/13/books/review/in-the-light-of-what-we-know-by-zia-haider-rahman.html?_r = 0