আমার ছেলেবেলা - মুর্তজা বশীর



এখন যেখানে ব্রিটিশ কাউন্সিল সেটা ছিল কলাগাছের বাগান। এর পাশেই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে সাদা গম্বুজ দেওয়া যে অংশটি, সেখানে আমরা থাকি। কবে এ বাসায় উঠেছি তা আমার সঠিক স্মরণ নেই। তবে জ্ঞান হওয়ার পর আমি দেখছি, এই বাসায় আমরা থাকি। বাবা তখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের হাউস টিউটর। আমার জন্ম অবশ্য এখানে হয়নি। মায়ের কাছে শুনেছি, ব্রিটিশ কাউন্সিলের উত্তর দিকে সুউচ্চ একটি বুরুজ দেওয়া দোতলা যে বাড়িটি ছিল, সেখানে আমার জন্ম ১৯৩২ সালে। আমার জন্মের দিনক্ষণ আমার পিতা স্বহস্তে অন্য ভাইদের মতো লিপিবদ্ধ করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছেন : হিঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৪ পৃষ্ঠার জের) ৯। সন ১৩৩৯। ১লা ভাদ্র, ইং ১৯৩২। ১৭ই আগস্ট হিঃ ১৩৫১। ১৪ রবিউস সানী বুধবার বেলা ১২। ২৫ মিনিট কৃষ্ণপক্ষ দ্বিতীয় আবু’ল খায়র্ মুর্তজা বশীরুল্লাহ্ সর্বশেষ লাইন ছিল আরবি অক্ষরের পুরো নাম।

[ছোটগল্প] আয়না - জসীম উদ্দীন

আয়না
জসীম উদ্দীন


এক চাষী খেতে ধান কাটিতে কাটিতে একখানা আয়না কুড়াইয়া পাইল। তখন এদেশে আয়নার চলন হয় নাই। কাহারও বাড়িতে একখানা আয়না কেহ দেখে নাই। এক কাবুলিওলার ঝুলি হইতে কি করিয়া আয়নাখানা মাঠের মাঝে পড়িয়া গিয়াছিল। আয়নাখানা পাইয়া চাষী হাতে লইল। হঠাৎ তাহার উপরে নজর দিতেই দেখে, আয়নার ভিতর মানুষ! আহা-হা, এ যে তাহার বাপজানের চেহারা!

কেন লিখি —ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়


আমার মতে প্রশ্নটি এতই অবিশেষ যে ভিন্ন ভিন্ন সাহিত্যিকের কাছ থেকে তার বিভিন্ন উত্তর থেকে লেখা সম্বন্ধে কোনো মূল্যবান সিদ্ধান্তে আসা যায় না। যখন উদ্দেশ্যটা নিশ্চয়ই সাহিত্যিক, ব্যক্তিগত জীবনের গোপন খবর জানা নয়, তখন প্রশ্নের রূপ অন্যপ্রকারের হওয়াই ভালো ছিল; এই যেমন, ঐ রচনাটি অন্যভাবে না সাজিয়ে কেন এইভাবেই সাজালেন, কিংবা কেমন করে আপনার বক্তব্যটি এই বিশেষ রূপটি পেলা? অর্থাৎ, আমার মতে why-এর বদলে how-এর দিকে ঝোঁক দিলেই সমালোচনার পক্ষে সুবিধা হতো। আর প্রশ্নটির অন্তরালে একটা দার্শনিক মন উকি দিচ্ছে—সেটা বোধহয় ঠিক প্রগতিশীল সাহিত্যের উপযোগী নয়। কেন, কেন, কেন, কেন এই জীবন ধারণ, কেন এই সাহিত্যের নেশা... ? নিতান্ত ভারতীয়, নিতান্ত মধ্যযুগীয়, নিতান্ত হিন্দু...নয় কি? তার চেয়ে কোন মানসিক প্রক্রিয়ায় বিষ্ণু দে ‘জন্মাষ্টমী’ লেখেন, প্রেমেন মিত্র গল্প খাড়া করেন, মানিক বন্দোপাধ্যায় তাঁর গল্পের কাঠামো গড়ে তোলেন যদি জিজ্ঞাসা করা হতো, এবং তাঁরা ভেবেচিন্তে উত্তর দিতেন। তবে আমার মতো শিক্ষার্থী সাহিত্যিকের কল্যাণ হতো।

জলচোর - অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়


জলচোর - অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

মেয়ে দুটো যায় কোথায়? কে জানে কোথায় যায়। তামাটে অন্ধকারে বিবর্ণ মেয়ে দুটো হেঁটে যায়। কেউ কোনও প্রশ্ন করে না। তবে যখন-তখন মানুষজন সুযোগ পেলেই তাড়া করে। থাকে খালপাড়ের বস্তিতে। বস্তি উচ্ছেদ হবার কথা। বস্তি উচ্ছেদ হলে কোথায় যে যাবে!
কী হবে অত সব ভেবে। কেউ কারও জন্য ভাবে না। যে যার তালে আছে। কিশোরী মেয়েটি বড়ো হতে হতে এই সার বুঝেছে। কেউ চেনে না, কোথায় থাকে, কী খায়। কেউ জানে না বললে ঠিক বলা হবে না—সহদেব জানে। বন অফিসের গৌরাঙ্গ চেনে, আরও অনেকে। সারাদিন রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে যা হয়। ন্যাড়া মাথা, ফ্রক গায়, লম্বা এক কিশোরী আর তার কনিষ্ঠ বোন কাজল, কাজলের হাত ধরে সাঁজ লাগার আগে গাছপালার ছায়ায় তারা দুন্ঠজনেই আকাশে তারা খুঁজে বেড়ায়।
আকাশে তারা খুঁজে পেলেই তারা হাঁটে।

সাক্ষাৎকার - হাসান আজিজুল হক [ ছোটগল্প ]

সাক্ষাৎকার

হাসান আজিজুল হক
লোকটা গত শতাব্দীর কায়দামাফিক সূর্যাস্ত দেখছিল। তার চোখে ফুটে উঠেছিল তন্ময় কল্পনা : বাঁদিকে চওড়া নদী, সেখানে সূর্যের প্রতিবিম্ব ডুবে যাচ্ছে, খানিকটা স্রোত সিঁদুরের মতো হিঙুল, স্রোত পেরিয়ে বালির চড়া, ধূসর হতে হতে আস্তে মিলিয়ে যায়; লোকটার ডানদিকে বিরাট মাঠ, মাঠ উঁচু-নিচু, মধ্যে মধ্যে টিলা আছে। এতক্ষণ লাল রং মাখানো ছিল, এখন মিলিয়ে যাচ্ছে।

বালথাজারের চমৎকার বিকেল - গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

বালথাজারের চমৎকার বিকেল
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

অনুবাদ : বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

খাঁচাটা তৈরি হল, অবশেষে। বালথাজার চালা থেকে ওটা ঝুলিয়ে দিল, অভ্যাসবশত। দুপুরের খাওয়া শেষ করতে-করতে সবাই বলতে লাগল, এটা দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর খাঁচা। এত লোক দেখতে এল যে, বাড়ির সামনে ভিড় জমে গেল। ফলে বালথাজারকে খাঁচাটা নামিয়ে নিয়ে দোকান বন্ধ করতে হল।

প্রকাশক : রিটন খান, সম্পাদকমন্ডলী : এমরান হোসেন রাসেল, রিটন খান
Copyright © 2020. All rights reserved by বইয়ের হাট