বইয়ের হাট গল্প প্রতিযোগিতার ফলাফল

বইয়ের হাট গল্প প্রতিযোগিতার ফলাফল।
বিজয়ী এবং অংশগ্রহণকারী সকলকে আমাদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন

৩য়ঃ মাহমুদুল করিম জিসান
গল্পঃ খোকা মিসড দ্য প্লেন
পুরস্কারঃ ১০০০ টাকার সমপরিমান বই

খোকাটা দেখতে দেখতে কেমন বড় হয়ে গেল! সেদিন তো সবাই অবাক, ওর বাবা একটা বাঁশি কিনে এনে পুঁউউউ করতেই সেটা নেয়ার জন্য হামা দিয়ে আসতে আসতে হঠাৎ কি ভেবে যেন টেবিলের পা ধরে ধুম করে দাঁড়িয়ে পড়ল! তিন-চার সেকেন্ডের বেশি যদিও দাঁড়াতে পারেনি, ধপাস করে পড়ে গেছে। তাতে কি, 'হাঁটিতে শিখে না কেহ না খেয়ে আছাড়' হুম!

তবে ঐ এক সমস্যা- এক্কেবারে খেতে চায় না। টিভি দেখিয়ে, গান শুনিয়ে, মোবাইল দিয়ে কত কিছু করে যে খাওয়াতে হয়! সেদিন সকালে বারান্দায় খোকার মা খোকাকে খাওয়াচ্ছিল। এমন সময় ওদের মাথার উপর দিয়ে বিকট শব্দে উড়ে গেল একটা ফাইটার প্লেন। খোকার মা বলল, ঐ যে দেখ প্লেন যাচ্ছে। তুমি এখন না খেলে প্লেন তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে। এমন সময় গেল আরেকটা ফাইটার। ভয় পেয়ে হোক বা না হোক, খোকা কপকপ করে এক বাটি খিচুড়ি খেয়ে ফেলল!

রাতে যখন আবার খোকার মা ওকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে, তখন খোকা বলল- পে-ন। ওর মা প্রথমে না বুঝলেও পরে বুঝল ওকে এখন প্লেন দেখাতে হবে, নইলে খাবে না।

বাড়ির পাশে রাস্তা দিয়ে জোরে শব্দ করে কোনো কিছু গেলেই এখন খোকা বলে ওঠে পে-ন পে-ন। আর হামা দিয়ে বারান্দায় যেতে চায়, যেন গেলেই দেখতে পাবে।

ওর মায়ের জন্য ভালোই হল। প্লেনের কথা বলে বলে, প্লেনের ছবি দেখিয়ে, ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখিয়ে ওকে এখন খাওয়ানো যায়।

সেদিন দুপুরে খোকা আর ওর মা দুজনেই ঘুমাচ্ছিল। খোকার বাবা পাশের ঘরে টিভি দেখছিল। হঠাৎ খোকার ঘুম ভেঙে গেল। এমন সময় উড়ে গেল একটা প্লেন। শব্দ শুনেই খোকা খুশিতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলল পে-ন পে-ন। তারপর হামা দিতে শুরু করল। উড়ে গেল আরো একটা প্লেন। খোকার খুশি দেখে কে! মা মরণঘুম ঘুমাচ্ছে, বাবা দেখছে টিভি। এদিকে খোকা এগিয়ে যাচ্ছে। খাটটা বেশ উঁচু। খোকা এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে আর বলছে- পে-ন, পে-ন।

লোকে যখন খোকার মাকে বলে, কি গো, ছেলের মাথার পেছনে এমন কেটে গেল কীভাবে, খোকার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, খাট থেকে পড়ে গিয়ে।

খোকার মা জানে না খোকা যে প্লেন ধরতে গিয়েছিল, ধরতে পারেনি!


২য়ঃ নাহার তৃনা
গল্পঃ ফসকা গেরো
পুরস্কারঃ ৩০০০ টাকার সমপরিমান বই

সারারাত ঘুম হয়নি। পরদিন কোথাও যাবার থাকলে এমন হয়। সকালে চায়ের কাপে চুমুকটা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যেতে যেতে ভাবছি প্রথমে দুবাই, দুবাই থেকে নিউইয়র্ক, নিউইয়র্ক থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কানাডা। রুটপ্ল্যান পাকা। জায়গামত লোক আছে। এয়ারপোর্টে পৌঁছে আমিরাতের কাউন্টার খোলার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। মালামাল বুকিং দিয়ে ঝাড়া হাত পা নিয়ে ইমিগ্রেশানের মুখোমুখি। একটু টেনশান এখানে। কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাবেন, আগে গেছেন কিনা, দুনিয়ার আজাইরা প্রশ্ন। ধুকপুক করতে করতে এই অংশটাও পার হয়ে গেলাম। ফ্লাইটের আরো দেড় ঘন্টা বাকী। এখন আর কোন টেনশান নাই। নিজেকে মুক্ত মানব মনে হলো। এমেক্স লাউঞ্জে গিয়ে ফ্রি নাস্তাটা সেরে নেয়া যাক। নাস্তা সেরে গরম কফিতে চুমুক দিয়ে সামনের পত্রিকায় চোখ দিলাম। পত্রিকায় আজকে সব যেন সুখবর।

বোর্ডিং করার ঘোষণা ভেসে এলো স্পীকারে 'ফ্লাইট ইকে-০৯৮৭......' দ্রুত গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। সামনে বিশ পঁচিশ জনের মতো আছে। এগিয়ে যেতে শেষ পাঁচজনের মধ্যে চলে এলাম। এমন সময় পেছন থেকে লাইন ভেঙ্গে কেউ এগিয়ে আসতে থাকলে বিরক্ত হয়ে তাকালাম।

কালো চশমা পরা একজন এসে হাত চেপে আমাকে লাইন থেকে বাইরে নিয়ে এলো।
'জাহাঙ্গীর সাহেব, আরেকটু হলেই তো ফসকে গেছিলেন......'

চোখে অন্ধকার দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলাম, কানাডায় পাচার করা দেড়শো কোটি টাকা এখন কার ভোগে যাবে?


১মঃ সৌরভ ভট্টাচার্য
গল্পঃ মোড়
পুরস্কারঃ ৫০০০ টাকার সমপরিমান বই

রণেন্দু ছিটকে সিটে শুয়ে পড়ল প্রায়। পাখিটা এমন আচমকা লাগল কাঁচে। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। ফ্লাইট সাড়ে পাঁচটায়। রণেন্দু আড়চোখে দেখল, উবেরের ড্রাইভার আয়নায় তাকে দেখেই চোখ ফেরাল। লজ্জা করছে, এতটা রিয়্যাক্ট করার কি ছিল? একটু আগেই গানটা বন্ধ করতে বলেছে, রূঢ়ভাবেই বলেছে। কিন্তু এমন কেন হচ্ছে? আর্লি ফরটিতে এত বড় প্রোমোশন মার্কেটিং-এর লাইনে ক'টা হয়?

“আপনি অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন বড় ধরণের কখনও?" অবান্তর প্রশ্ন। তবু করল।

ড্রাইভার মাথা নাড়ল।

ওয়াটস অ্যাপে একটা ফ্লাইট ক্রাশের ভিডিও এসেছে গ্রুপে। আজ সকালেই হয়েছে, নাইরোবিতে। পাখির ধাক্কায় নাকি ফ্লাইটটা ভেঙে পড়েছে।

ড্রাইভারের দৃষ্টিটা অস্বচ্ছ, সন্দেহ করছে?

সুদীপ্তকে বিট্রে করেছে? সুদীপ্ত'র মা অসুস্থ থাকত, ও অনিয়মিত ছিল, হতে পারে সে মোর capable, কিন্তু consistency-র কোনো দাম নেই?

গাড়িটা লিক হল। প্রচণ্ড বৃষ্টি। ধারেকাছে কোনো দোকান নেই। ফোন লাগছে না। ড্রাইভার নেমে গেল, মেকানিক আনতে গেছে। রণেন্দু একা। ঘাম হচ্ছে। এসি অফ্। কাঁচ নামাল। প্লেন যাচ্ছে মেঘের আড়ালে। বিকট শব্দ। সুদীপ্ত'র মাকে রণেন্দু দেখেনি। নিজের মাকেও না।

ফ্লাইটটা মিস হবে বুঝতেই পেরেছিল। এয়ারপোর্টের দু'নম্বর গেটের মুখে কাকেদের তাণ্ডব, একটা কাক তারে শক খেয়ে মরে পড়ে। সুদীপ্ত'র মেসেজ ঢুকল, congratulations.
রাস্তায় দাঁড়াল। মাথার উপর কাকের জটলা।

ফাইজারে একটা অফার আছে। ছেড়ে দিলে হয় না? একটা কুকুর কাকটাকে মুখে করে দৌড়াচ্ছে।

“Sudipta, I quit."

বাস স্টপে দাঁড়াল রণেন্দু।

No comments:

Post a Comment

প্রকাশক : রিটন খান, সম্পাদকমন্ডলী : এমরান হোসেন রাসেল, রিটন খান
Copyright © 2020. All rights reserved by বইয়ের হাট