আইডিয়ার কামড়া
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
১৪ বছর বয়স থেকে গল্প লেখা শুরু করেছিলাম৷ তখন আমি ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র৷ ওই বয়সেই আমরা কয়েকজন সহপাঠী মিলে একটা সাহিত্যিক গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলাম৷ সন্তোষকুমার ঘোষ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, রমাকৃষ্ণ মৈত্র, জগৎ দাস এবং আমি— এই ক'জন ক্লাসফ্রেন্ড এক সঙ্গে লেখালেখি করতাম৷ সন্তোষ আর সুভাষ উত্তরকালে বাংলা সাহিত্যে বড় মাপের প্রতিষ্ঠা পেয়েছে৷ রমাকৃষ্ণ ও জগতের লেখার হাতও ছিল চমৎকার৷ কিন্তু, আমারই মতো ওরা লেখার অভ্যাসটা দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারেনি৷ পারলে ওরা সাহিত্য জগতে নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠা পেত বলে আমার বিশ্বাস৷ যাই হোক, যেটা ঘটেনি তা নিয়ে আক্ষেপ করা নিরর্থক৷ পুরনো দিনের দিকে একটু ফিরে তাকালে রোমন্থনজনিত বিষণ্ণতা সম্পূর্ণ কাটিয়ে ওঠা মুশকিল৷ মনে পড়ছে, স্কুলে পড়ার সময় গড়ে তুলেছিলাম কল্যাণ সঙ্ঘ সাহিত্যসভা৷ শাঁখারিপাড়ায় আমার মামাবাড়িতে এই সাহিত্যসভার অধিবেশন হত৷ প্রতি মাসে৷ আমার মামাতো দাদা অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সাহিত্যসভার মূল পান্ডা৷ তা ছাড়া তিনি ছিলেন বিপ্লবী রাজনীতির একজন একনিষ্ঠ কর্মী৷ ওঁর আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্সের খবর আমি অবশ্য জানতে পেরেছিলাম অনেক পরে৷ যাই হোক, কল্যাণ সঙ্ঘ সাহিত্যসভার আমন্ত্রণে নরেন্দ্র দেব, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং বুদ্ধদেব বসুর মতো দিকপাল সাহিত্যসেবীও শাঁখারিপাড়ায় আমার মামাবাড়িতে আসতেন৷ ওঁদের ধরে আনার ব্যাপারে আমার মামাতো দাদার কৃতিত্বই ছিল সব থেকে বেশি৷ আমাদের সাহিত্য জীবনের গার্জেন ছিলেন মাস্টারমশাই সুধাংশু সেনগুপ্ত, নন্দগোপাল সেনগুপ্তের ছোটভাই৷ আমরা একটা লাইব্রেরিও চালাতাম৷ লাইব্রেরিতে বইয়ের সংগ্রহ খুব বিরাট কিছু ছিল না৷ কিন্তু, আমাদের মতো খুদে সাহিত্যিসাধকের কাছে এই লাইব্রেরি ছিল মন্দিরের মতো৷ পাঠ্যপুস্তকের জগতের বাইরে যে আরও একটা জগৎ আছে তা কিন্তু আমরা কল্যাণ সঙ্ঘ সাহিত্যসভার আশীর্বাদেই টের পেয়েছিলাম৷
১৫ বছর বয়সে আমার গল্প প্রথম পত্রস্থ হয়৷ 'আলেয়া' নামে একটি পত্রিকায়৷ তার পর 'বাতায়নে'ও কয়েকটা গল্প লিখি৷ কিন্তু, আমার যে-গল্প পাঠকসমাজে খানিকটা সাড়া তুলেছিল সেটি প্রকাশিত হয়েছিল 'দেশ' পত্রিকায়, গল্পের নাম 'একটি দিন'৷ সেই সময় 'দেশ' পত্রিকার কর্ণধার ছিলেন পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়৷ আরও অনেকের সঙ্গে পবিত্রবাবুর মতো সাহিত্যিকও এই গল্পের প্রশংসা করেছিলেন বলে আজও রোমাঞ্চ অনুভব করি৷
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি গান গেয়েও ভীষণ আনন্দ পেতাম৷ বন্ধুরা প্রত্যেকেই ছিল আমার গানের উৎসাহদাতা৷ ক্লাস নাইনে যখন পড়ি তখন এক দিন সুভাষ রেডিওতে নিয়ে গেল৷ অডিশন দিয়ে রেডিও প্রোগ্রাম পেলাম৷ পরের বছরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল৷ ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হলাম৷ তখন থেকেই গল্প লেখা কমতে শুরু করে৷ গানের চর্চায় কিন্তু ছেদ পড়েনি এতটুকু৷ গানের জগতে আমার প্রতিষ্ঠার জন্য সুভাষের অবদানই সব থেকে বেশি৷ সে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন রেকর্ড কোম্পানিতে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েছে৷ ক্রমাগত বিফল হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত এক দিন— ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কলম্বিয়াতে পৌঁছলাম৷ আমার গানের অর্ধেক শুনেই কলম্বিয়ার তদানীন্তন বড়কর্তা শৈলেশ দত্তগুপ্ত মুগ্ধ হলেন৷ তার পর আমার গানের রেকর্ডিং হল৷ ব্যস, রাতারাতি আমি গানের জগতে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলাম৷ তার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি৷ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে যত দ্রুত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, সাহিত্যজগৎ থেকে ঠিক সেই গতিতে দূরে সরে যেতে হয়েছে৷ সাহিত্যিক বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে যায়৷ সুভাষ অবশ্য ব্যতিক্রম৷ সে আমার বাড়ির কাছেই থাকে৷ সেই সূত্রে এখনও ওর সঙ্গে আন্তরিক যোগাযোগ রয়েছে৷ সন্তোষ মারা যাওয়ার আগে তার সঙ্গেও নতুন করে একটা যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল৷ আসলে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্পর্কে সন্তোষের অপরিসীম ভালবাসাই আমাদের পুনর্যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধনের কাজ করছিল৷ কিন্তু, সন্তোষ হঠাৎই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেল৷ ওর অবর্তমানে এক এক সময় নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ বলে মনে হয়৷
লেখক জীবনে ফিরে যাওয়ার কথা আর ভাবি না৷ সময়ও নেই হাতে৷ তা ছাড়া নিজের সাহিত্যিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও আমি ষোলো আনা সচেতন৷ তবু এখনও মাঝে মাঝে মাথায় গল্পের আইডিয়া আসে৷ জীবনের নানা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই নিজের মধ্যে গল্প লেখার তাগিদটা দানা বাঁধতে শুরু করে৷ অবশ্যই অনিয়মিতভাবে৷ তবে, এখন আর কলম হাতে ধরি না৷ ওই ব্যাপারে বড্ড কুঁড়েমি এসে গেছে৷ একান্তই যদি গল্প লেখার তাগিদ এড়াতে না-পারি, মুখে মুখে বলতে শুরু করি৷
আগেই বলছি, মনগড়া গল্প লিখতে পারি না৷ এ যাবৎ যৎসামান্য যা কিছু লিখেছি তার সঙ্গে আমার জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতার অচ্ছেদ্য যোগাযোগ রয়েছে৷ বছর খানেক আগে শেষ যে-গল্পটা লিখেছি তা-ও নিজের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে লেখা৷ একটি ছেলে আমার কাছে আসত৷ আমাকে মামা বলে ডাকত৷ ছেলেটির স্বপ্ন ছিল সে কিশোরকুমারের মতো গায়ক হবে৷ গানের জন্য জীবনের অন্যান্য কোনও দিকেই মনোযোগ দিতে চায়নি৷ অথচ ভাল ক্রিকেট খেলতে পারত, পড়াশোনাতেও খারাপ ছিল না৷ আমি ওকে বলতাম, গানকে কখনও পেশা করতে যেও না, তাতে বিরাট স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হতে পারে৷ কিন্তু, আমার কথা সে শোনেনি৷ পেশাদার গায়ক হওয়ার স্বপ্নে অন্য কোনও কাজই সে করল না৷ আর কিশোরকুমারও সে হতে পারেনি৷ আশাভঙ্গের বেদনায় শেষ পর্যন্ত উন্মাদ হয়ে গেছে৷... মোটামুটি এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই শেষ গল্পটা লিখেছি৷ মানে বলেছি৷ তারাজ্যোতি ক্যাসেট থেকে ট্রান্সক্রাইব করেছে৷ ভবিষ্যতে অভিজ্ঞতাভিত্তিক আরও কিছু গল্প লিখতে পারি৷ কিন্তু, যুগন্ধর সাহিত্যিক হওয়ার বাসনা আমার নেই, কখনও ছিল না৷ স্রেফ অভিজ্ঞতা আর আইডিয়ার কামড়ে কিছু লিখতে চাই৷ পাঠকদের কাছে তার কতটা সমাদর হবে তা নিয়ে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নেই৷
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
১৪ বছর বয়স থেকে গল্প লেখা শুরু করেছিলাম৷ তখন আমি ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র৷ ওই বয়সেই আমরা কয়েকজন সহপাঠী মিলে একটা সাহিত্যিক গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলাম৷ সন্তোষকুমার ঘোষ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, রমাকৃষ্ণ মৈত্র, জগৎ দাস এবং আমি— এই ক'জন ক্লাসফ্রেন্ড এক সঙ্গে লেখালেখি করতাম৷ সন্তোষ আর সুভাষ উত্তরকালে বাংলা সাহিত্যে বড় মাপের প্রতিষ্ঠা পেয়েছে৷ রমাকৃষ্ণ ও জগতের লেখার হাতও ছিল চমৎকার৷ কিন্তু, আমারই মতো ওরা লেখার অভ্যাসটা দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারেনি৷ পারলে ওরা সাহিত্য জগতে নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠা পেত বলে আমার বিশ্বাস৷ যাই হোক, যেটা ঘটেনি তা নিয়ে আক্ষেপ করা নিরর্থক৷ পুরনো দিনের দিকে একটু ফিরে তাকালে রোমন্থনজনিত বিষণ্ণতা সম্পূর্ণ কাটিয়ে ওঠা মুশকিল৷ মনে পড়ছে, স্কুলে পড়ার সময় গড়ে তুলেছিলাম কল্যাণ সঙ্ঘ সাহিত্যসভা৷ শাঁখারিপাড়ায় আমার মামাবাড়িতে এই সাহিত্যসভার অধিবেশন হত৷ প্রতি মাসে৷ আমার মামাতো দাদা অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সাহিত্যসভার মূল পান্ডা৷ তা ছাড়া তিনি ছিলেন বিপ্লবী রাজনীতির একজন একনিষ্ঠ কর্মী৷ ওঁর আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্সের খবর আমি অবশ্য জানতে পেরেছিলাম অনেক পরে৷ যাই হোক, কল্যাণ সঙ্ঘ সাহিত্যসভার আমন্ত্রণে নরেন্দ্র দেব, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং বুদ্ধদেব বসুর মতো দিকপাল সাহিত্যসেবীও শাঁখারিপাড়ায় আমার মামাবাড়িতে আসতেন৷ ওঁদের ধরে আনার ব্যাপারে আমার মামাতো দাদার কৃতিত্বই ছিল সব থেকে বেশি৷ আমাদের সাহিত্য জীবনের গার্জেন ছিলেন মাস্টারমশাই সুধাংশু সেনগুপ্ত, নন্দগোপাল সেনগুপ্তের ছোটভাই৷ আমরা একটা লাইব্রেরিও চালাতাম৷ লাইব্রেরিতে বইয়ের সংগ্রহ খুব বিরাট কিছু ছিল না৷ কিন্তু, আমাদের মতো খুদে সাহিত্যিসাধকের কাছে এই লাইব্রেরি ছিল মন্দিরের মতো৷ পাঠ্যপুস্তকের জগতের বাইরে যে আরও একটা জগৎ আছে তা কিন্তু আমরা কল্যাণ সঙ্ঘ সাহিত্যসভার আশীর্বাদেই টের পেয়েছিলাম৷
১৫ বছর বয়সে আমার গল্প প্রথম পত্রস্থ হয়৷ 'আলেয়া' নামে একটি পত্রিকায়৷ তার পর 'বাতায়নে'ও কয়েকটা গল্প লিখি৷ কিন্তু, আমার যে-গল্প পাঠকসমাজে খানিকটা সাড়া তুলেছিল সেটি প্রকাশিত হয়েছিল 'দেশ' পত্রিকায়, গল্পের নাম 'একটি দিন'৷ সেই সময় 'দেশ' পত্রিকার কর্ণধার ছিলেন পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়৷ আরও অনেকের সঙ্গে পবিত্রবাবুর মতো সাহিত্যিকও এই গল্পের প্রশংসা করেছিলেন বলে আজও রোমাঞ্চ অনুভব করি৷
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি গান গেয়েও ভীষণ আনন্দ পেতাম৷ বন্ধুরা প্রত্যেকেই ছিল আমার গানের উৎসাহদাতা৷ ক্লাস নাইনে যখন পড়ি তখন এক দিন সুভাষ রেডিওতে নিয়ে গেল৷ অডিশন দিয়ে রেডিও প্রোগ্রাম পেলাম৷ পরের বছরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল৷ ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হলাম৷ তখন থেকেই গল্প লেখা কমতে শুরু করে৷ গানের চর্চায় কিন্তু ছেদ পড়েনি এতটুকু৷ গানের জগতে আমার প্রতিষ্ঠার জন্য সুভাষের অবদানই সব থেকে বেশি৷ সে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন রেকর্ড কোম্পানিতে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েছে৷ ক্রমাগত বিফল হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত এক দিন— ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কলম্বিয়াতে পৌঁছলাম৷ আমার গানের অর্ধেক শুনেই কলম্বিয়ার তদানীন্তন বড়কর্তা শৈলেশ দত্তগুপ্ত মুগ্ধ হলেন৷ তার পর আমার গানের রেকর্ডিং হল৷ ব্যস, রাতারাতি আমি গানের জগতে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলাম৷ তার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি৷ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে যত দ্রুত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, সাহিত্যজগৎ থেকে ঠিক সেই গতিতে দূরে সরে যেতে হয়েছে৷ সাহিত্যিক বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে যায়৷ সুভাষ অবশ্য ব্যতিক্রম৷ সে আমার বাড়ির কাছেই থাকে৷ সেই সূত্রে এখনও ওর সঙ্গে আন্তরিক যোগাযোগ রয়েছে৷ সন্তোষ মারা যাওয়ার আগে তার সঙ্গেও নতুন করে একটা যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল৷ আসলে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্পর্কে সন্তোষের অপরিসীম ভালবাসাই আমাদের পুনর্যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধনের কাজ করছিল৷ কিন্তু, সন্তোষ হঠাৎই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেল৷ ওর অবর্তমানে এক এক সময় নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ বলে মনে হয়৷
লেখক জীবনে ফিরে যাওয়ার কথা আর ভাবি না৷ সময়ও নেই হাতে৷ তা ছাড়া নিজের সাহিত্যিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও আমি ষোলো আনা সচেতন৷ তবু এখনও মাঝে মাঝে মাথায় গল্পের আইডিয়া আসে৷ জীবনের নানা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই নিজের মধ্যে গল্প লেখার তাগিদটা দানা বাঁধতে শুরু করে৷ অবশ্যই অনিয়মিতভাবে৷ তবে, এখন আর কলম হাতে ধরি না৷ ওই ব্যাপারে বড্ড কুঁড়েমি এসে গেছে৷ একান্তই যদি গল্প লেখার তাগিদ এড়াতে না-পারি, মুখে মুখে বলতে শুরু করি৷
আগেই বলছি, মনগড়া গল্প লিখতে পারি না৷ এ যাবৎ যৎসামান্য যা কিছু লিখেছি তার সঙ্গে আমার জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতার অচ্ছেদ্য যোগাযোগ রয়েছে৷ বছর খানেক আগে শেষ যে-গল্পটা লিখেছি তা-ও নিজের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে লেখা৷ একটি ছেলে আমার কাছে আসত৷ আমাকে মামা বলে ডাকত৷ ছেলেটির স্বপ্ন ছিল সে কিশোরকুমারের মতো গায়ক হবে৷ গানের জন্য জীবনের অন্যান্য কোনও দিকেই মনোযোগ দিতে চায়নি৷ অথচ ভাল ক্রিকেট খেলতে পারত, পড়াশোনাতেও খারাপ ছিল না৷ আমি ওকে বলতাম, গানকে কখনও পেশা করতে যেও না, তাতে বিরাট স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হতে পারে৷ কিন্তু, আমার কথা সে শোনেনি৷ পেশাদার গায়ক হওয়ার স্বপ্নে অন্য কোনও কাজই সে করল না৷ আর কিশোরকুমারও সে হতে পারেনি৷ আশাভঙ্গের বেদনায় শেষ পর্যন্ত উন্মাদ হয়ে গেছে৷... মোটামুটি এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই শেষ গল্পটা লিখেছি৷ মানে বলেছি৷ তারাজ্যোতি ক্যাসেট থেকে ট্রান্সক্রাইব করেছে৷ ভবিষ্যতে অভিজ্ঞতাভিত্তিক আরও কিছু গল্প লিখতে পারি৷ কিন্তু, যুগন্ধর সাহিত্যিক হওয়ার বাসনা আমার নেই, কখনও ছিল না৷ স্রেফ অভিজ্ঞতা আর আইডিয়ার কামড়ে কিছু লিখতে চাই৷ পাঠকদের কাছে তার কতটা সমাদর হবে তা নিয়ে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নেই৷
No comments:
Post a Comment